Breaking News
Loading...

Info Post

মাহে রজব (ফজিলত ও বরকত)

মাহে রজব হিজরী বর্ষের ৭ম মাস। পবিত্র হাদীস শরীফে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ মাসের বহু ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। নামকরণ ঃ কামূসনামক প্রসিদ্ধ অভিধানে রাজাবার অর্থ লিখেছেন- ভীতিপ্রদর্শন করেছে’, ‘সম্মান করেছে। এ থেকে রজব শব্দের উৎপত্তি। রজব মাসে ক্বোরবানী করাকে আরবীতে তারজীববলা হয়। আরববাসীগণ এ মাসের প্রতি সম্মান করে আসতো। আল্লামা জাযারী তাঁর নিহায়াহয় লিখেছেন-
তারজীবমানে তাযীম করা। এ কারণে আরববাসীগণ রজব মাসকে সম্মান করতো। মাহে জুমাদাল উখরা ও মাহে শাবানের মধ্যবর্তী মাস হচ্ছে রজব। এ মাসকে রজব-ই মুদ্বার (মুদ্বার গোত্রের রজব মাস) ও বলা হতো। হাদীস শরীফে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এ মাসের অবস্থান নির্ণয় করে দিয়েছেন রজবহ্েচ্ছ জুমাদাল উখরাহ ও মাহে শাবানের মধ্যবর্তী মাস। এর কারণও এ যে, জাহেলী যুগের লোকেরা এ মাসকে মনগড়াভাবে সরিয়ে দিয়ে অন্য মাসকে তদস্থলে সাব্যস্থ করতো। তারা ওই যুগে দিন এবং মাসেও কম বেশী করে ফেলতো। তাদের এসব খেয়াল ও কাজকে বাতিল ঘোষণা করে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকিদ সহকারে ওই মাসের অবস্থান নির্ণয় করে দিয়েছেন । উল্লেখ্য, জাহেলী যুগের লোকেরা রজব মাসে যে ক্বোরবানীর নামে পশু যবেহ করতো সেটাকে আতীরাহ-ই রজবিয়া বলা হতো। রজবকে আসাম্মাবা বধিরও বলা হতো। কারণ ক্বামূস’-এ উল্লেখ করা হয়েছে- রজব বধিরঅর্থাৎ এ মাসে কোন বিশেষ শব্দ আসতো না। আর কোন আহবানকারী ওহে অমুক, ওহে বন্ধুইত্যাদি বলেও আহবান করতো না। নিহায়াহয় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘আল্লাহর মাস রজবপ্রকৃত পক্ষে বধির। কেননা, এ মাসে হাতিয়ারের ঝনঝনানির শব্দ আসতো না । আর যেহেতু এটা সম্মানিত মাস, সেহেতু মানুষের গুণকে সামনে রেখে এ মাসও বধিরবলে আখ্যায়িত হতে থাকে। [মা- সাবাতা বিস্সুন্নাহ ফী আইয়্যামিস সানাহ]
ভূল ধারণার অপনোদন ঃ শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি তাঁর মা- সাবাতা বিস্সুন্নাহয় আরো লিখেছেন যে, এ মাসকে বধিরবলে আখ্যায়িত করার পেছনে কিছু ভিত্তিহীন কথাবার্তাও মুসলিম সমাজে বিরাজ করেছে যেমনঃ_ এক ঃ হাশরের দিনে এ মাস নিজে বধির হয়ে যাবে। মানুষের অপরাধগুলো ও দোষ- ত্রটির সাক্ষ্য দেবে না। আর বলবে, “আমি তো বধির। আমি কোন কিছু শুনতে পাচ্ছি না।দুই ঃ এ মাসকে আল্লাহর মাস এজন্য বলা হয় যে, এ মাস বান্দাদের দোষ- ত্রুটি গোপনকারী, যা আল্লাহ পাকের সুন্নাত। কারণ তাঁর একটি গুণবাচক নাম হচ্ছে সাত্তারঅর্থাৎ বান্দাদের দোষ- ত্রুটি গোপনকারী। বস্তুত এ দুটি যুক্তিই ভিত্তিহীন। কারণ, আল্লাহ তায়ালা সাত্তার’ (দোষ গোপনকারী) হওয়ার অর্থ এ যে, নাউযুবিল্লাহি মিন যালিকা, বধিরতার বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে। আর এ কথা একেবারে স্পষ্ট যে, বধির ব্যক্তি তার বধিরতার কারণে শুধু কারো কথা ও কথোপকথন শুনতে অক্ষম হয় এবং বধিরতার ওযর পেশ করে মানুষের কথাবার্তা গোপন করতে পারে মাত্র। (সঠিক বিষয় তো আল্লাহর জানা আছে)। মাহে রজবের ফযীলত ঃ জামেউল কবীর’- এ মাহে রজবের বহু ফযিলত ও রজব মাসের আমল সমূহের ফযিলত উল্লেখ করা হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হলো- এক. আবুল ফাতহ ইবনে ফাওয়ারিস তাঁর আমলীনামক কিতাবে হযরত হাসান বসরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বরাতে মুরসালসূত্রে লিখেছেন, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- রজব আল্লাহর মাস। শাবান
আমার মাস। আর রমযান হচ্ছে আমার উম্মতের মাস। রজব ওই মহান মাস, যাতে নেক কাজগুলোর সাওয়াব বহুগুণ বেশি দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি এ মাসে একদিন রোযা রাখবে, তাকে গোটা বছরের রোযার মতো সাওয়াব দেওয়া হবে। দুই. ইমাম রাফেঈ সাঈদের মৌখিক বর্ণনা লিখেছেন- রজব নিঃসন্দেহে আল্লাহর মাস। সেটাকে বধির (আসাম্ম) এজন্য বলা হয় যে, জাহেলী যুগেও লোকেরা এ মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ রাখতো এবং নিজেদের হাতিয়ার তুলে রাখতো। লোকেরা এ মাসে নিরাপদে শান্তিতে থাকতো। সমস্ত রাস্তা নিরাপদ হতো। কেউ কারো ভয়ে ভীত থাকতো না । এ গোটা মাসেই নিরাপত্তা ও শান্তি পরিলক্ষিত হতো। তিন. ইমাম বায়হাক্বী তার শুআবুল ঈমান’- এ হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বার মৌখিক বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন- রজব ওই মহান মাস; যাতে আল্লাহ তায়ালা নেক কাজগুলোর সাওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি করে দান করেন। যে ব্যক্তি এ মাসে একদিন রোযা রেখেছে, সে যেনো গোটা বছর রোযা রেখেছে। যে ব্যক্তি এ মাসে সাতদিন রোযা রাখে, তার জন্য দোযখের সাতটি দরজা বন্ধ হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি এ মাসে আটদিন রোযা রাখে, তার জন্য বেহেশতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হয়। এ মাসে দশদিন রোযা পালনকারী আল্লাহর দরবারে যা চাইবে, তাকে আল্লাহ তায়ালা তা দান করবেন। আর যে ব্যক্তি এ মাসে পনেরটি রোযা পালন করবে, আসমান থেকে এক আহবানকারী আহবান করে- হে রোযাদার! তোমার বিগত সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওযা হয়েছে। এখন থেকে নেক আমল আরম্ভ করে দাও! যে ব্যক্তি বেশি পরিমাণে ভাল কাজ করবে, তাকে সাওয়াবও অধিক দেওয়া হবে। চার. ইমাম বায়হাক্বী তার শুআবুল ঈমান’- এ লিখেছেন, রজব মাসে একদিন ও একরাত অতিমাত্রায় মহান ও ফযিলত মন্ডিত। যে ব্যক্তি ওইদিন রোযা রাখে এবং ওই রাতে ইবাদত করে, সে যেনো একশ বছর রোযা রাখলো এবং একশ বছর ইবাদত করেছে। আর ওই তারিখ হচ্ছে ২৭ রজব। এ মাসে আল্লাহ তায়ালা রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর শির মোবারকে নুবূয়তের তাজপরিয়েছেন। শবে রাগাইব ও এর নামায ঃ মাহে রজবের প্রথম বৃহস্পিতিবার দিবাগত রাতকে লোকেরা লায়লাতুর রাগাইববলে। মাশাইখে কেরামের মতে, এ রাতে বিশেষ নিয়মে এক নামায পড়া হয়; (যদিও মুহাদ্দিসগণ [[মা- সাবাতা বিস্সুন্নাহ] এ মাসের আমল সমূহ ঃ ঙ্ রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন যখন রজব মাস দেখবে প্রথমে একবার নিম্নলিখিত দোয়া পড়বে- আল্লাহুম্মা বা-রিক লানা- ফী রাজাবা ও শাবা- না ওয়া বালি্লগনা ইলা শাহরে রামাদ্বা-না। অর্থঃ- হে আল্লাহ আমাদের জন্য রজব ও শাবানে বরকত নাযিল করো এবং আমাদেরকে রমযান মাস পর্যন্ত পেঁৗছিয়ে দাও। ঙ্ মাহে রজবের রাতে এশার নামাযের পূর্বে বিশ রাকআত নামায দশ সালামে পড়বেন। প্রতি রাকআতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কাফিরূনতিনবার করে এবং সূরা ইখলাসতিনবার করে পড়বেন। ইনশাল্লাহু তায়ালা এ নামায সম্পন্নকারীকে আল্লাহ পাক
কি্বয়ামত দিবসে শহীদদের অন্তর্ভূক্ত করবেন এবং তার হাজার মর্যাদা বুলন্দ করবেন। ঙ্ প্রথম রাতে এশার নামাযের পর চার রাকআত নামায দুসালামে পড়বেন। প্রত্যেক রাকআত সূরা ফাতিহার পর সূরা আলাম নাশরাহএকবার, সূরা-ই ইখলাসএকবার, ‘সূরা ফালাক্বএকবার ও সূরা নাসএকবার পড়বেন। যখন দুরাকআত পড়ে সালাম ফেরাবেন, তখন কলেমা-ই তাওহীদ ৩৩ বার ও দুরূদ শরীফ ৩৩ বার পড়ে যে কোন প্রয়োজন হয় আল্লাহ পাকের নিকট চাইবেন। ইনশাল্লাহু তায়ালা প্রতিটি প্রয়োজন পূরণ হবে। ঙ্ রজবের প্রথম রাতে এশার নামাযের পর আরো দুরাকআত নামায এভাবে পড়া যায়ঃ সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস একবার পড়বেন। ইনশাল্লাহু তায়ালা এ নামাযের বরকতে আল্লাহ পাক তাকে সুস্থতা দান করবেন। রোগীর আরোগ্য লাভের জন্য এ নামায অতীব ফযিলতমন্ডিত ও উপকারী। ঙ্ প্রথম রাতে তাহাজ্জুুদের নামাযের সময় দশ রাকআত নামায দুরাকআত করে পাঁচ সালামে পড়বেন। সালাম ফেরানোর পর দুহাত তুলে একবার কলেমা-ই তাওহীদ পড়বেন। অতঃপর একবার নিম্নলিখিত দোয়া পড়বেন- উচ্চারণ ঃ আল্লাহুম্মা লা- মা-নিআ লিমা- আত্বোয়াতা, ওয়াইলা মুতি্বয়া লিমা-
মানাতা, ওয়ালা ইনফাউ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু। এ দোআ পাঠ করে আল্লাহ পাকের দরবারে যে কোন জিনিসের জন্য দোআ করবেন, ইনশাল্লাহ কবুল হবে। ঙ্ মাহে রজবের প্রথম বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে লাইলাতুর রাগা-ইব এশার নামাযের পর দুরাকআত নফল নামায পড়বেন- প্রথম রাকআত সূরা ফাতিহার পর সূরা বাক্বারার শেষ রূকু’ (আমানার রাসূল থেকে কাফিরুন) পর্যন্ত সাতবার পড়বেন। তারপর ২য় রাকআত নফল নামায পড়বেন- প্রথম রাকআতে সূরা ফাতিহার পর সূরা হাশরএর শেষ তিন আয়াত (হুয়াল্লাহুল্লাযি থেকে হাকিম) পর্যন্ত সাত বার পড়বেন। সালাম ফেরানোর পর আল্লাহ পাকের দরবারে যে কোন দোআই করবেন, ইনশাল্লাহ পূরণ হবে। উদ্দেশ্য হাসিলের
জন্য এ নামায অতি উত্তম তথা উপকারী। ঙ্ মাহে রজবের প্রথম জুমুর দিন যোহর ও আসরের মধ্যবতর্ী সময়ে চার রাকআত নামায এক সালামে পড়বেন। প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহার পর আয়াতুল কুরসীসাতবার ও সূরা-ই ইখলাসপাঁচবার পড়বেন। সালাম ফেরানোর পর পঁচিশ বার পড়বেন- উচ্চারণঃ লা- হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা-বিল্লা-হিল করীবিল মুতাআল। অতঃপর ১০০ বার নিম্নলিখিত ইসতিগফার পড়বেন- উচ্চারণঃ আসতাগফিরুল্লা- হাল্লাযী লা-ইল্লা-হুয়াল হাইয়ু্যল ক্বাইয়ূ্যমু গাফ্ফারুয্যুনু- বি ওয়া সাত্তা-রুল উয়ূ- বি ওয়া আতু-বু ইলাইহি। অতঃপর ১০০ বার দুরূদ শরীফ পড়ে যে কোন দোআই করবেন- চাই পার্থিব বিষয়ে হোক, চাই দ্বীনি বিষয়ে হোক। ইনশাল্লাহু তায়ালা আল্লাহর দরবারে অবশ্যই কবূল হবে। ঙ্ মাহে রজবের ৭ম, ১৫তম ও ২৭তম রাতগুলোর মধ্যে যে কোন রাতে এশার
নামাযের পর বিশ রাকআত নামায দশ সালামে পড়বেন। প্রত্যেক রাকআতে সূরা-ই ফাতিহার পর সূরা ইখলাস একবার করে পড়বেন। আল্লাহ তায়ালা এ নামায সম্পন্নকারীকে দুনিয়াবী ও দ্বীনি সমস্ত আপদ থেকে নিরাপদে রাখবেন এবং পূল সেরাতের রাস্তা পাড়ি দেওয়া তার জন্য সহজ হবে। ঙ্ পঞ্চদশ রাতে এশার নামাযের পর বিশ রাকআত নফল নামায দশ সালামে পড়বেন। প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস একবার করে পড়বেন। ইনশাল্লাহ্ তায়ালা আল্লাহ পাক ওই নামাযের অসংখ্য সাওয়াব দান করবেন। আর এ নামায সম্পন্নকারীর গুনাহ এমনভাবে ঝরে পড়বে, যেমন গাছের শুষ্ক পাতা ঝরে পড়ে। ঙ্ মাহে রজবের যে কোন জুমুআর রাতে এশার নামাযের পর দুরাকআত নামায পড়বেন। প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহার পর আয়াতুল কুরসী এগার বার,
সূরা যিলযাল এগার বার, সূরা তাকাসূর এগারবার পড়বেন। সালাম ফিরানোর পর আল্লাহ পাকের দরবারে আপন গুনাহ সমূহের মাগফিরাত প্রার্থনা করবেন। ইনশাল্লাহ এ নামায সম্পন্নকারীর সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে আল্লাহ তাকে দয়া করবেন। বৎসরের চৌদ্দ রাত্রিঃ হযরত গাউসূল আযম আবদুল কাদের জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু গুনিয়াতুত ত্বালেবীনগ্রন্থে বৎসরের চৌদ্দটি রাত্রির কথা উল্লেখ করে ঐ রাত্রসমূহে ইবাদত করা মোস্তাহাব বলে উল্লেখ করেছেন_ শরীয়তের কতেক বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম রাহিমাহুমূল্লাহ এমন কতগুলো রাত্র গণনা করে উল্লেখ করেছেন, যে রাত্রগুলোতে ইবাদত করা মোস্তাহাব। বৎসরের ঐ রাত্রগুলোর সংখ্যা হলো ১৪টি। যথা- ১। মুহাররম মাসের প্রথম রাত্র। ২। মুহাররম মাসের ১০ম রাত্র। (আশুরার রাত্র) ৩। রজব মাসের প্রথম রাত্র। ৪। রজব মাসের ১৫ই রাত্র। ৫। রজব ২৭ শে রাত্র। (শবে মিরাজ) ৬। শাবান মাসের ১৫ই রাত্র। (শবে বরাত) ৭। রোযার ঈদের রাত্র (শাওয়াল মাসের ১লা রাত্র) ৮। আরাফাতের রাত্র (৯ই যিলহজ্ব রাত্র) ৯। কোরবানীর ঈদের রাত্র (১০ই যিলহজ্ব রাত্র) ১০-১৪। রমযানের শেষ দশদিনের বেজোড় ৫ রাত্র (২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ রাত্র)। (গুনিয়াতুত ত্বালেবীন পৃষ্ঠা- ২৩৬) ঐ ১৪ রাত্র সমূহে নামায পড়ার নিয়ম ঃ হযরত গাউসুল আযম আবদুল কাদির জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু শবে বরাত সহ বৎসরের ঐ ১৪ রাত্রে নফল নামায পড়ার তরতীব ও নিয়ম এভাবে বর্ণনা করেছেন_ “শাবান মাসের ১৫ই রাত্রে যে নিয়মে নফল নামায পড়ার বিষয়ে রেওয়ায়াত এসেছে- তা হচ্ছে এক হাজার বার কুল হুয়াল্লাহু সূরা দ্বারা একশত রাকআত নফল নামায আদায় করা- প্রতি রাকআতে দশবার করে কুলহুয়াল্লাহু সূরা পড়তে হবে। এ নামাযের নাম হচ্ছে সালাতুল খাইর। এই নামাযের বিভিন্ন বরকত রয়েছে। আমাদের পূর্বকার সলফে সালেহীন ও বুযুর্গানে দ্বীন একত্রিত হয়ে জামাআতের সাথে এই নামায আদায় করতেন। এই নামাযে অনেক ফযিলত ও অনেক সাওয়াব রয়েছে। হযরত হাসান বসরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে- তিনি
বলেন, “আমাকে নবীজীর ত্রিশজন সাহাবী বলেছেন যে, যে ব্যক্তি শবে বরাতে উক্ত নামায পড়বে, আল্লাহ তার
৭০টি হাজত বা মকসুদ পূরণ করবেন। ঐ ৭০টি মকসুদের মধ্যে নিম্নতম হলো- গুনাহ
ক্ষমা।” (হযরত গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু শবে বরাতের নামাযের নিয়ম ও ফযিলত বর্ণনা করার পর বলেন) আমি রজব মাসের ফযিলতের অধ্যায়ে প্রসঙ্গক্রমে যে ১৪টি রাত্রির উল্লেখ করেছি_ সবগুলোতেই এই সালাতুল খাইরপড়া মোস্তাহাব। শবে মিরাজের নফল নামায ঃ রজবের ২৭তম রাতে বার রাকআত নামায তিন সালামে পড়বেন। প্রথম চার রাকআতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ক্বদরতিনবার করে প্রত্যেক রাকআতে পড়বেন। সালাম ফেরানোর পর বসে ৭০ বার পড়বেন- উচ্চারণ ঃ লা-ইলা- হা ইল্লাল্লাহুল মালিকুল হক্বক্কুল মুবীন। দ্বিতীয় চার রাকআতে সূরা ফাতিহার পর সূরা নাসরতিনবার করে প্রত্যেক রাকআতে পড়বেন। সালাম ফেরানোর পর বসে ৭০ বার পড়বেন_ লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহুল
মালিকুল হক্বক্কুল মুবীন। তৃতীয় চার রাকআতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাসতিনবার করে প্রত্যেক রাকআতে পড়বেন। সালাম ফেরানোর পর বসে সত্তরবার সূরা আলাম নাশরাহপড়বেন। তারপর আল্লাহ রাব্বুল ইয্যাতের মহান দরবারে দোআ প্রার্থনা করবেন। ইনশাল্লাহু তায়ালা যে প্রয়োজনই থাকুক না কেন, তা আল্লাহ পাক পূরণ করবেন। ঙ্ মাহে রজবের ২৭ তারিখ রাতে আরো চার রাকআত নামায দুসালামে পড়তে পারেন। প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস এক বার করে পড়বেন। ইনশাল্লাহ তায়ালা যে কেউ এ নামায সম্পন্ন করবে আল্লাহ তায়ালা তার জান ও মালকে হিফাযত করবেন। ঙ্ মাহে রজবের ২৭ তারিখ রাতে আরো চার রাকআত নামায দুসালামে পড়তে পারেন। প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস ২৭ বার
করে পড়বেন। সালাম ফেরানোর পর সত্তর বার দুরূদ শরীফ পড়বেন এবং আপন গুনাহগুলোর মাগফিরাত কামনা করবেন। ইনশাল্লাহহু তায়ালা পরওয়ারদিগারে আলম আপন পূর্ণাঙ্গ রহমত দ্বারা গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। ঙ্ মাহে রজবের ২৭ তারিখ যোহরের নামাযের পর চার রাকআত নামায এক সালামে পড়বেন। প্রথম রাকআতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ক্বদর তিনবার, দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ফাতিহার পরসূরা ইখলাস তিনবার, তৃতীয়
রাকআতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস তিনবার এবং চতুর্থ রাকআতে সূরা ফাতিহার পর সূরা নাস তিনবার পড়বেন। সালাম ফিরানোর পর দুরূদ শরীফ ১০০ বার ও ইস্তিগফার ১০০ বার পাঠ করবেন। এ নামায প্রত্যেক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ইনশাল্লাহ অতি মাত্রায় উত্তম ও ফলপ্রসূ। ওযীফাঃ মাহে রজবের ১ম তারিখ থেকে প্রত্যেক নামাযের পর তিনবার করে নিম্বলিখিত দোয়া পাঠ করার বহু ফযিলত রয়েছে- উচ্চারণঃ আসতাগফিরুল্লা- হাল আযী-মাল্লাযী লা- ইলাহা ইল্লা-হুয়াল হাইয়ূ্যল ক্বাইয়ূম। ইলাইহি তাওবাতু আবদিন যা-লিমিন লা-ইয়ামলিকু নাফসাহু দ্বাররাওঁ ওয়ালা নাফআন ওয়ালা মাওতান ওয়ালা হায়া-তান ওয়ালা নুশূ-রা। ঙ্ রজব মাসের ১৫ তারিখে কোন নামাযের পর একশবার এ ইসতিগফার পড়লে বহু ফযীলত পাওয়া যায়। এ দোআ পাঠকের সমস্ত পাপ মুছে আল্লাহ পাক সেগুলো নেকীতে পরিবর্তিত করে দেবেন। ইস্তিগফারটি নিম্নরূপ- উচ্চারণ ঃ আস্তাগফিরুল্লা- হাল্লাযী লা-ইলাহা ইল্লা- হুয়াল হাইয়ূ্যল ক্বাইয়ূ্যম, গাফ্ফারুয যুনূবি ওয়া সাত্তারুল উয়ূবি ওয়া আতূ-বু ইলাইহি। ঙ্ মাহে রজবের যে কোন তারিখে যোহর, মাগরিব ও এশার নামাযের পর সূরা কাহফ একবার, সূরা ইয়াসীন একবার, সূরা হা-মীম একবার, সূরা দুখান একবার, সূরা মাআরিজ একবার পড়বেন। তারপর ১০০০ বার সূরা ইখলাস পড়বেন। আল্লাহ তায়ালা এ সূরাগুলো তিলাওয়াতকারীর উপর রহমত বর্ষণ করবেন ও বরকত (কল্যাণ) দান করবেন। নফল রোযা ঃ হুযুর-ই আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, রজব মাসের রোযার বহু বড় ফযিলত রয়েছে। আর ২৭ তারিখের রোযার সাওয়াব খুব বেশী। এ রোযার ফলে কবরের আযাব ও দোযখের আগুন থেকে নিরাপদ থাকা যাবে। রজব মাসের বিশেষ ঘটনাবলী ঃ ঙ্ বর্ণিত আছে যে, এ বরকতময় মাসের প্রথম তারিখে সাইয়্যেদুনা নূহ আলাইহিস সালাম কিস্তির উপর আরোহণ করেছিলেন। সেদিন তিনি নিজেও রোযা রেখেছেন, আপন সাথীদেরকেও রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর বরকতেও আল্লাহ তায়ালা তাঁকে তূফান ও জলোচ্ছ্বাস থেকে নাজাত দিয়েছেন, শত্রুদের ধ্বংস করেছেন এবং ভূ-পৃষ্ঠ কুফর ও শির্ক থেকে মুক্ত হয়েছিল। ঙ্ মাহে রজবের ১২ তারিখে হযরত জাফর সাদিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বরকতময় জন্ম হয়েছিলো। এ মাসের ২২ তারিখে তাঁর খতম শরীফের আয়োজন করা হয়। ঙ্ ১৫ তারিখে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তায়ালার সাথে কথোপকথন করেন। আর হযরত সাইয়্যেদুনা ইদ্রীস আলাইহিস সালামকে আসমানের উপর উঠানো হয়েছিলো। ঙ্ ২৭ রজব হুযুর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজের দুলহা হয়েছিলেন। আর আল্লাহর দীদার ও অন্যান্য বহু পুরস্কার ও বুযুর্গী দ্বারা ধন্য হয়েছেন। ঙ্ এ মাসের ২৮ তারিখে হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর নবূয়তের ঘোষণা ও তাঁর ওহী আসার সূচনা হয়েছে। এ মাসে যেসব বুযুর্গের ওফাত শরীফ হয়েছিলো তাঁদের কয়েকজন ঃ ঙ্ হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ৭ রজব, ৩৩ হিজরী। ঙ্ হযরত আমীর মুআবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ২২ রজব, ৬০ হিজরী। ঙ্ হযরত সালমান ফারসী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ১০ রজব, ৩৩ হিজরী। ঙ্ হযরত ইমাম-ই আযম আবূ হানীফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ৪ রজব, ১৫০ হিজরী। ঙ্ হযরত ইমাম শাফেঈ রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি ১লা রজব, ২০৪ হিজরী। ঙ্ হযরত ইমাম আবূ ইউসূফ রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি ২৭ রজব, ১৮৩ হিজরী। ঙ্ হযরত ইমাম মূসা কাযিম রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি ২৫ রজব, ১৮৩ হিজরী। ঙ্ হযরত ইমাম তিরমিযী রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি ১৩ রজব, ২৬৯ হিজরী। ঙ্ হযরত জুনাইদ বাগদাদী রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি ২৭ রজব, ২৯৮ হিজরী। ঙ্ হযরত খাজা মুঈন উদ্দীন আজমিরী রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি ৬ রজব, ৬৩৩ হিজরী। ঙ্ হযরত খাজা হুসামুদ্দীন খালাফে খাজা আজমিরী রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি ৬ রজব, ৬৩৩ হিজরী। ঙ্ হযরত খাজা কুতুব উদ্দীন মাওদূদ চিশতী রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি ১লা রজব। ঙ্ হযরত শামসূদ্দীন তাবরীযী রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি ৯ রজব, ৯৪৪ হিজরী। ঙ্ হযরত কাযী সানাউল্লাহ পানিপথি রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি ২৫ রজব, ১৩০২ হিজরী। ঙ্ হযরত শাহ নিমাতুল্লাহ ওয়ালী রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি ২৫ রজব । ঙ্ বাদশাহ শাহ্জাহান রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি ২৬ রজব, ১০৭৬ হিজরী। ঙ্ আল্লামা গাজী শেরে বাংলা আযীযুল হক শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি ১২রজব, ১৩৮৯ হিজরী। ঙ্ শাহ আবুল হোসাঈন নূরী রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি ১১ রজব, ১৩২৪ হিজরী । ঙ্ মাওলানা সাইয়্যেদ দীদার আলী রাহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি ২১ রজব, ১৩৫ হিজরী। [সূত্র ঃ মাসিক রেযা-ই মোস্তফা, গুজরানওয়ালা মা- সাবাতা বিস্সুন্নাহ, বারাহ মাহ কী নফল নামায]