নবুয়ত ও বেলায়াত
মানুষ যখন পার্থিব কামনা-বাসনায় মোহান্ধ হয়ে খোদার পথ থেকে দূরে সরে যায়, স্রষ্টার প্রেম ও স্মরণ থেকে বিচ্যূত হয়ে নানারূপ কুসংস্তারপূর্ণ কাজকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তখন বিশ্বপ্রভু মহান আল্লাহতায়ালা একজন সংস্কারককে মানবজাতির হেদায়েতের জন্য ধরাধামে প্রেরণ করেন। যগে যুগে দেশে দেশে নবী-রাসূলগণকে আল্লাহতায়ালা যুগ সংস্কারক হিসেবে মানব জাতির জন্য পাঠিয়েছেন। হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সঃ)-কে বিশ্বপ্রভু তৎকালীন আরবের আইয়্যামে জাহেলিয়ার যুগে পাঠিয়েছিলেন, কারণ তৎকালীন আরব
সমাজ ঐ সময়ে পঙ্কিলতার চরম স্তরে উপনীত হয়েছিল। তবে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) ও অন্যান্য নবী প্রেরণের প্রকৃতির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য ছিল। অন্যান্য নবী-রাসূলগণ কোন গোত্র কিংবা সম্প্রদায় বিশেষের হেদায়াতের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন, কিন্তু হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) প্রেরিত হয়েছিলেন সারা বিশ্বের গোটা মানবজাতির কল্যাণের জন্য। তাই তিনি সারা বিশ্বের জন্য রহমত বা আশীর্বাদ স্বরূপ। এখানেই নবী করিম (সঃ)-এর শ্রেষ্ঠত্ব এবং বিশেষত্ব। নবী করিম (সঃ)-এর নিকট খোদা প্রদত্ত দু’প্রকারের শক্তি ছিল- একটির নাম নবুয়তী শক্তি এবং অপরটির নাম বেলায়তী শক্তি। নবুয়তী শক্তি হচ্ছে ধর্ম প্রচার করার ক্ষমতা, যার বলে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) পয়গাম্বার হিসেবে আবির্ভুত হন এবং ইসলাম নামক বিজ্ঞানসম্মত সেরা ধর্ম প্রচার করে অন্ধকারে নিমজ্জ্বিত মানব জাতিকে আলো ও মুক্তির সন্ধান দান করেন। এই নবুয়তী ক্ষমতা পূর্বতন নবীদেরও ছিল, যার বলে তাঁরা নবী হিসেবে দুনিয়াতে অবতীর্ণ হয়ে আল্লাহর একাত্ববাদ প্রচার করতে সমর্থ হন। নবী করিম (সঃ)-এর তিরোধানের সাথে সাথে নব্যুয়তের চুড়ান্ত পর্যায় শেষ হয়ে যায় এবং নবুয়তের বিলুপ্তি ঘটে যেহেতু নবী করিম (সঃ) আখেরী নবী হিসেবেই খোদা কতৃক প্রেরিত হয়েছিলেন। নবী করিম (সঃ)-এর অপর ক্ষমতা ছিল বেলায়তী শক্তি বা মোজেজা সম্বলিত স্রষ্টার গোপন রহস্য। এই বেলায়তী শক্তির প্রভাবে নবী করিম (সঃ) চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করে কাফেরদেরকে দেখিয়েছিলেন, মরা গাছে ফল ফলিয়েছিলেন। মেরাজ বা মুক্ত প্রভু মিলনে নবী করিম (সঃ) বেলায়তী শক্তির চরম উৎকর্ষতা লাভ করেন। নবী করিম (সঃ)-এর তিরোধানের প্রাক্কালে হযরত আলি (কঃ)-কে তাঁর বেলায়তী শক্তির উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান। করণ রাসূলে পাক (সঃ) নিজেই বলেছেন – “আমি হলাম জ্ঞানের (এলমে লুদনীর) শহর আর হযরত আলী (কঃ) হল তার দরজা।” কালক্রমে বংশ-পরম্পরায় এই বেলায়তী শক্তি বিকাশ লাভ করতে থাকে। এই বেলায়তী শক্তির অধিকারী ব্যক্তিগণই পরবর্তীকালে কামেল অলি-আল্লাহ বা পরিপূর্ণ মানব হিসেবে জগতে আবির্ভূত হন।
সমাজ ঐ সময়ে পঙ্কিলতার চরম স্তরে উপনীত হয়েছিল। তবে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) ও অন্যান্য নবী প্রেরণের প্রকৃতির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য ছিল। অন্যান্য নবী-রাসূলগণ কোন গোত্র কিংবা সম্প্রদায় বিশেষের হেদায়াতের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন, কিন্তু হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) প্রেরিত হয়েছিলেন সারা বিশ্বের গোটা মানবজাতির কল্যাণের জন্য। তাই তিনি সারা বিশ্বের জন্য রহমত বা আশীর্বাদ স্বরূপ। এখানেই নবী করিম (সঃ)-এর শ্রেষ্ঠত্ব এবং বিশেষত্ব। নবী করিম (সঃ)-এর নিকট খোদা প্রদত্ত দু’প্রকারের শক্তি ছিল- একটির নাম নবুয়তী শক্তি এবং অপরটির নাম বেলায়তী শক্তি। নবুয়তী শক্তি হচ্ছে ধর্ম প্রচার করার ক্ষমতা, যার বলে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) পয়গাম্বার হিসেবে আবির্ভুত হন এবং ইসলাম নামক বিজ্ঞানসম্মত সেরা ধর্ম প্রচার করে অন্ধকারে নিমজ্জ্বিত মানব জাতিকে আলো ও মুক্তির সন্ধান দান করেন। এই নবুয়তী ক্ষমতা পূর্বতন নবীদেরও ছিল, যার বলে তাঁরা নবী হিসেবে দুনিয়াতে অবতীর্ণ হয়ে আল্লাহর একাত্ববাদ প্রচার করতে সমর্থ হন। নবী করিম (সঃ)-এর তিরোধানের সাথে সাথে নব্যুয়তের চুড়ান্ত পর্যায় শেষ হয়ে যায় এবং নবুয়তের বিলুপ্তি ঘটে যেহেতু নবী করিম (সঃ) আখেরী নবী হিসেবেই খোদা কতৃক প্রেরিত হয়েছিলেন। নবী করিম (সঃ)-এর অপর ক্ষমতা ছিল বেলায়তী শক্তি বা মোজেজা সম্বলিত স্রষ্টার গোপন রহস্য। এই বেলায়তী শক্তির প্রভাবে নবী করিম (সঃ) চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করে কাফেরদেরকে দেখিয়েছিলেন, মরা গাছে ফল ফলিয়েছিলেন। মেরাজ বা মুক্ত প্রভু মিলনে নবী করিম (সঃ) বেলায়তী শক্তির চরম উৎকর্ষতা লাভ করেন। নবী করিম (সঃ)-এর তিরোধানের প্রাক্কালে হযরত আলি (কঃ)-কে তাঁর বেলায়তী শক্তির উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান। করণ রাসূলে পাক (সঃ) নিজেই বলেছেন – “আমি হলাম জ্ঞানের (এলমে লুদনীর) শহর আর হযরত আলী (কঃ) হল তার দরজা।” কালক্রমে বংশ-পরম্পরায় এই বেলায়তী শক্তি বিকাশ লাভ করতে থাকে। এই বেলায়তী শক্তির অধিকারী ব্যক্তিগণই পরবর্তীকালে কামেল অলি-আল্লাহ বা পরিপূর্ণ মানব হিসেবে জগতে আবির্ভূত হন।
হযরত নবী করিম (সঃ)-এর পর থেকে খোদা কতৃক জগতবাসীর জন্য নবী প্রেরণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় বটে কিন্তু মানব সমাজের তমসার রাত কেটে যায়নি। বিভিন্ন প্রকার পার্থিব লোভ-লালসা, হিংসা-দ্বেষ, মারামারি, খুনাখুনি, অন্ধ বিশ্বাস প্রভৃতি বাণিজ্য চক্রের মতই বিশ্বগোলকে চক্রাকারে আবর্তিত হয়। তাই সংস্কারকের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বেলায়তী ক্ষমার সম্পন্ন অলি-আল্লাহগণের উপর আল্লাহতায়ালা এই সংস্কারের দায়িত্ব অর্পণ করেন যাঁরা যুগ যুগ ধরে কোরআন-হাদীস ও সুন্নাহর আলোকে মানব জাতিকে হেদায়েত করে সত্যের সন্ধান দিচ্ছেন। তাই আমরা দেখতে পাই মানব জাতির ক্রান্তিলগ্নে হযরত গাউছুল আজম, বড় পীর (রঃ), হযরত মঈনউদ্দীন চিশতী (রঃ), হযরত শাহ জালাল (রঃ) ও হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (রঃ)-এর মত যগ সংস্কারক অলি-আল্লাহগণের আবির্ভাব। সুতরাং হেদায়তের যুগকে আমরা মোটামুটি দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি- (১) নবী যুগ, (২) অলি যুগ। নবী যুগে নবীরাই যুগ সংস্কারক হিসেবে আবির্ভূত হন এবং রসুল (সঃ)-এর সৃষ্টির প্রয়োজন ছিল, তদরূপ রসূল (সঃ)-এর বেলায়তী ক্ষমতার বিকাশের জন্য অলি-উল্লাহদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আল্লাহ পাক নিজেই বলেছেন, “আমি যদি রসূল (সঃ)-কে সৃষ্টি না করতাম তবে আসমান-জমিন, লৌহ-কলম কিছুই সৃষ্টি করতাম না”। সকল সৃষ্টির আগে আল্লাহ পাক নূরে-মোহাম্মদী সৃষ্টি করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে রসূল (সঃ)-কে আল্লাহর ট্রেডমার্ক বললে অত্যুক্তি হবে না। কেননা আমরা ঐ আল্লাহকেই চিনি যাঁর নামের পাশে স্বযত্নে লেখা আছে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ নাম। সুতরাং আল্লাহ পাককে চিনতে হলে রসূল (সঃ) কে চিনতে হবে এবং রসূল (সঃ)-কে চিনলে আল্লাহকে চেনা যাবে। অপরদিকে রসূল (সঃ)-কে চিনতে হলে অলি-আল্লাহগণকে চিনতে হবে, কারণ অলিগণ হচ্ছেন রসূল (সঃ)-এর জীবনাদর্শ। সুন্নাহর পরিপূর্ণ রূপদানের মাধ্যমে এবং রসূল (সঃ)-এর পূর্ণাঙ্গ জীবনাদর্শনকে জীবন যাত্রায় প্রতিফলনের দ্বারা অলি-আল্লাহগণ পরিপূর্ণ মানব কিংবা কামেল হতে পেরেছেন। সুতরাং আমরা ঐ রসূল (সঃ)-কে চিনি যাঁর উম্মতের মধ্যে কেরামত সম্পন্ন অলি-আল্লাহ আছে অর্থাৎ যাঁর একটি বেলায়তী নাম আহমদ রয়েছে। প্রসংগতঃ উল্ল্যেখযোগ্য যে, মুহাম্মদ হচ্ছেন রসুল করিম (সঃ)-এর নবুয়তী নাম। অলি-আল্লাহগণ হচ্ছেন আল্লাহর আরশ। আল্লাহ রসূল-অলি এই তিনের সম্পর্কের সত্যিকার প্রকৃতি নিম্নোক্ত বাণীগুলোতে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে।
“আমি আহাদ ছিলাম, মীমকে নিজের মধ্যে স্থান দান করিলাম, মহব্বত ও ভালবাসাতে নিজেকে আহমদ নামে পরিচিত করলাম”। (হাদিস)
“আহমদের নূরের উজ্জ্বলতাতে আদমের অস্তিত্ব বিকশিত। আল্লাহতায়ালা নিজেই এই আকৃতির স্রষ্টা এবং নিজেই বিকশিত”। (হাদিস)
হাদিস কুদসীতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন-”বান্দাগণ নফল এবাদতের দ্বারা আমার সান্নিধ্যের দিকে অগ্রসর হতে থাকে যে পর্যন্ত না আমি তাকে মহব্বত করি এবং আমি যখন মহব্বত করি তখন আমি তার শ্রবণ শক্তি হয়ে যাই যা দ্বারা সে শ্রবণ করে, আমি তার দর্শন শক্তি হয়ে যাই যার দ্বারা সে দেখে”।
সুতরাং উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে ইহা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, আল্লাহ-রসূল-অলি যদিও এক নন, তাঁরা একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্নও নন। আমরা রসূল (সঃ)-কে যেমন আল্লাহ বলতে পারি না, আবার আল্লাহ পাক থেকে আলাদাও ভাবতে পারি না।