মাহে শাবান
হিজরী বর্ষের ৮ম মাস মাহে শাবান।আল্লাহর প্রিয় রাসূল(দঃ)এ মাসকে
স্বীয় মাস হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, “শাবান আমারই মাস,
এমাসের শ্রেষ্ঠত্ব অপরাপর মাসগুলির উপর সেরূপ,যেমন আমার শ্রেষ্ঠত্ব সমস- মাখলুকের উপর।”এমাসে
আল্লাহর অপরিমেয় রহমত ও করুণার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়,যাতে বান্দাগণ স্বীয় গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নিতে পারে। বিশেষত,এমাসের ১৪তারিখ দিবাগত রাত ‘শবে বরাত’ হিসেবে পরিচিত।
@হাদীস শরীফে বর্ণিত আছেঃ যে ব্যক্তি এমাসের প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে চার রাকাত নফল নামাজ(প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা একবার এবং সূরা ইখলাস ত্রিশ বার করে) আদায় করবে তাকে একটি হজ্ব ও উমরাহ’র সওয়াব দেয়া হবে।
@যে ব্যক্তি এমাসে তিন হাজার বার দুরূদ শরীফ আদায় করবে কিয়ামত দিবসে তার জন্যে রাসূলে খোদা(দঃ)এর সুপারিশ অবধারিত।
শবে বরাত
@হাদীস শরীফে বর্ণিত আছেঃ যে ব্যক্তি এমাসের প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে চার রাকাত নফল নামাজ(প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা একবার এবং সূরা ইখলাস ত্রিশ বার করে) আদায় করবে তাকে একটি হজ্ব ও উমরাহ’র সওয়াব দেয়া হবে।
@যে ব্যক্তি এমাসে তিন হাজার বার দুরূদ শরীফ আদায় করবে কিয়ামত দিবসে তার জন্যে রাসূলে খোদা(দঃ)এর সুপারিশ অবধারিত।
শবে বরাত
শবে বরাত ফার্সী শব্দ।এর অর্থ ভাগ্যরজনী।এক বরকতময় রজনী,করুণার রজনী,সনদপ্রাপ্তির রজনীও বলা হয়ে
থাকে।সুনানে ইবনে মাযা শরীফে হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি
বলেন- রাসূলে পাক (দঃ) বলেছেন, যখন শাবানের মধ্যবর্তী
রাত(১৫তম রাত)আসে তখন তোমরা রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত-বন্দেগী কর এবং দিনের বেলায়
রোজা রাখ।কেননা আল্লাহ তাআলা ঐ রাতের সূর্যাসে-র পরপরই প্রথম আসমানে অবতরণ করে
ডাকতে থাকেন।কেউ ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি?ক্ষমা চাইলে আমি
ক্ষমা করে দেব।কেউ রোগাক্রান- প্রার্থী আছ কি?শেফা চাইলে
আমি শেফা করে দেব।কেউ রিজিক প্রার্থী আছ কি?রিজিক চাইলে
আমি রিজিক দেব।কেউ আছ কি? কেউ আছ কি?এভাবে ফজর পর্যন- আহ্বান আসতেই থাকে।
*হজরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন একদা নবীজী গভীর রাতে আমার বিছানা হতে উঠে গেলেন,আমি মনে করলাম হয়তো তিনি অন্য কোনো বিবির ঘরে তাশরীফ নিয়েছেন,কিছুক্ষণ পর আমি তাকে তালাশ করতে গিয়ে আমার হাত তার নূরানী পা মোবারকে
লাগল।আমি বুঝতে পারলাম তিনি নামাজে সিজদারত। তিনি ওই রাতে ফজরের পূর্ব পর্যন-
ইবাদতে মশগুল ছিলেন।কখনো দাঁড়িয়ে আবার কখনো বসে,এক
পর্যায়ে তার পা মোবারক ফুলে যাচ্ছিল। আমি তাঁর পা টিপতে টিপতে বললাম-আমার
মাতা-পিতা আপনার নূরানী কদমে কোরবান,আমাকে বলুন আল্লাহ কি
আপনাকে নিষ্পাপ করেননি?তবুও আপনি এত কষ্ট করছেন কেন?জবাবে নবীজী বলেন, আয়েশা! তুমি কি জাননা আজকে
কোন রাত? আজ এমন রাত যাতে আল্লাহ আগামী একবছরে যত সন-ান
জন্মগ্রহণ করবে সকলের নাম লিপিবদ্ধ করা হবে।আর যারা মৃত্যুবরণ করবে তাদর নামও লিপিবদ্ধ
করা হবে।এরাতে সকল সৃষ্টির রিজিক বন্টন করা হবে এবং এরাতেই সকলের আমলনামা আসমানে
উঠিয়ে নেয়া হবে।
*হজরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন-প্রিয় নবী(দঃ)ধারাবাহিকভবে এতোবেশী রোজা রাখতেন যে,আমরা বলাবলি করতাম হুজুর করীম(দঃ)হয়তো আর রোজা ছাড়বেন না আবার কখনও এতোবেশী
রোজা থেকে বিরত থাকতেন যে,আমরা বলতাম হুজুর করীম(দঃ) হয়তো
আর রোজা রাখবেন না।তাই আমরা রমজান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে পূর্ণ মাস রোজা রাখতে
দেখিনি এবং সবচেয়ে বেশী যে মাসে নফল রোজা রাখতেন তা হলো শাবান মাস।
@যে ব্যক্তি এরাত্রিতে মাগরিবের পর ইবাদতের নিয়তে
গোসল করবে তার জন্যে প্রত্যেক পানির বিন্দুর বিনিময়ে সাতশো রাকাত নফল নামাজের
সওয়াব দেয়া হবে।গোসলের পর দুই রাকাত তাহিয়াতুল অযুর নামাজ আদায় করবে(প্রত্যেক
রাকাতে একবার আয়াতুল কুরসী ও তিনবার সূরা ইখলাস দ্বারা)।এরপর সূরা ফাতিহার সাথে
একবার সূরা ক্বদর ও পচিঁশবর সূরা ইখলাস দ্বারা আট রাকাত নফল নামাজ আদায়
করবে।প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে সূরা কাফেরূন,ইখলাস,ফালাক ও নাস এ চারটি সূরা এবং একবার আয়াতুল কুরসী ও লাক্বাদ জা
আকুম..শেষ পর্যন- দ্বারা আদায় করে সালাম ফিরানোর পর আল্লাহর দরবারে যে যা দোয়া
করবে আল্লাহ তাই কবুল করবেন।
@ইশার নামাজ বিতরসহ আদায় করবে যাতে ফরজ ওয়াজিব
থেকে মুক্ত হয়ে যায়।পরে নফল নামাজ পড়া শুরু করবে।
@এরাতে কোরআন তেলোয়াত, মিলাদ-কিয়াম,দুরূদ
শরীফ,জিকির-আযকার যত বেশী করা যায় তত
উত্তম।
@হাদীস শরীফে এরাত্রে বিনিদ্র ইবাদত বন্দেগীতে
অতিবাহিত করে পরদিন রোজা পালন করার জন্যে বলা হয়েছে।
@হজরত আয়েশা(রাঃ) বর্ণণা করেন,একরাতে আমি আমার বিছানায় আমার প্রিয় রাসূলকে না পেয়ে ঘর হতে বেরিয়ে
পড়রাম।পরিশেষে আমি তাকে খুঁজে পেলাম জান্নাতুল বাকীতে।আমি দেখলাম তিনি সেকনে মাথা
মোবারক আসমানের দিকে উচুঁ করে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করছেন।আমাকে দেখে নবীজী এরশাদ
করেন,‘হে আয়েশা!তুমি কি এ ভাবনায় রয়েছ যে,আল্লাহ এবং তার রাসূল তোমার হক নষ্ট করেছেন?উত্তরে
আয়েশা(রাঃ)বলেন,না তা নয়।তবে আমি মনে করেছি,আপনি অন্য কোনো বিবির ঘরে তাশরীফ নিয়ে গেছেন।নবীজী এরশাদ করেন,“আজ শাবানের ১৪ তারিখের রাত্র।এরাতে মহান আল্লাহ প্রথম আসমানে তাশরীফ
আনেন এবং বনী কালব গোত্রের বকরি সমূহের লোমের অধিকসংখ্যক বান্দার গুণাহ মাফ করে
দেন।
@হজরত আবু হোরায়রা (রাঃ)হতে বর্ণিত,রাসূলে পাক (দঃ) এরশাদ করেন-শাবানের ১৪ তারিখ রাতে হজরত জিব্রাইল
(আঃ)আমার কাছে এসে বললেন,ইয়া রাসূলাল্লাহ!আসমানের দিকে একটু
নজর করুন। আমি বললাম,আজ কোন রাত? উত্তরে জিব্রাইল (আঃ) বললেন-আজ সে রাত যে রাতে মহান আল্লাহ রহমতের
তিনটি দরজা খুলে দেন।শিরককারী ছাড়া সবার গুণাহ মাফ করেন।কয়েকপ্রকার লোকের গুণাহ আজ
রাতে মাফ হবে না। যেমন, যাদুকর, গণক,
সুদখোর,যিনাকারী ও মদপানকারী।এরা যতক্ষণ
খালেছ অন-রে তাওবা করবে না ততক্ষণ তাদের গুণাহ মাফ হবে না।রাতের এক চতুর্থাংশ শেষ
হয়ে গেলে জিব্রাইল (আঃ) আবারও আসলেন এবং আরয করলেন, ইয়া
রাসূলাল্লাহ!আপনার মাথা মোবারক আসমানের দিকে উত্তোলন করুন।নবীজী বলেন-আমি দেখতে
পেলাম বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়েছে।প্রথম দরজায় একজন ফেরেশতা চিৎকার করে
বলছেন,সুসংবাদ ঐ ব্যক্তির জন্য যিনি আজ রাতে রুকু
করেছেন।দ্বিতীয় দরজায় আরেকজন ফেরেশতা বলছেন,সুসংবাদ ঐ
ব্যক্তির জন্য যিনি আজ রাতে সিজদা করেছেন।তৃতীয় দরজায় আরেকজন ফেরেশতা বলছেন,সুসংবাদ ঐ ব্যক্তির জন্য যিনি আজ রাতে আল্লাহর দরবারে দোয়া
করেছেন।চতুর্থ দরজায় আরেক ফেরেশতা বলছেন,সুসংবাদ ঐ
ব্যক্তির জন্য যিনি আজ সারারাত আল্লাহর জিকির করেছেন।পঞ্চম দরজায় আরেকজন ফেরেশতা
দাড়িয়ে সুসংবাদ দিচ্ছেন তাদের জন্য যারা আল্লাহর ভয়ে আজ বিনিদ্র রজনী যাপন
করেছেন।ষষ্ঠ দরজায় আরেক ফেরেশতা বলছেন,সমস- মুসলমানদের জন্য
আজ খুশীর রাত,নেয়ামতের রাত,বরকতের
রাত।সপ্তম দরজায় একজন ফেরেশতা চিৎকার করে বলছেন,আজকের
রাতে প্রার্থনাকারী কেউ আছ কি?মহান আল্লাহ তাদের সকল
গুণাহ মাফ করে দেবেন।নবীজী এরশাদ করেন,হে জিব্রাঈল!এসমস-
দরজা কতক্ষণ খোলা থাকবে?জিব্রাঈল(আঃ) আরয করেন,এসব দরজা ফজর পর্যন- খোলা থাকবে। Read More