Breaking News
Loading...

Info Post

১। মিশর প্রাচীন সভ্যতার দেশ মিশর। নীলনদের দান মিশর। হযরত মুসা (আঃ) হযরত হারুন (আঃ) সহ আরো বহু আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের পবিত্র পদধূলি ধন্য মিশর। ইসলামী কৃষ্টি- সংস্কৃতি শিল্প সাহিত্য স্থাপত্য শৈলীর বিকাশের উর্বরা ভূমি মিশর। এখানে রয়েছে মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম বিদ্যাপীঠ আল আযহার। ফাতেমী বংশীয় খলীফা আল মুঈয লিদ্বীনিল্লাহর নির্দেশে ৯৭৫ খৃষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে। এদেশে আরো রয়েছে কারবালার অমর শহীদ হযরত ইমাম হোসায়ন রাদিঃ এর পবিত্র মস্তক শরীফের মাজার, অসংখ্য অলী-বুযুর্গ ও আহলে বাইতের মাজার, ঐতিহাসিক বিভিন্ন স্থাপনা, সুউচ্চ মিনারা শোভিত কয়েক হাযার মসজিদ।মদীনা শরীফের পর মিসরের কায়রো ও আলেকজান্দ্রিয়ায় সর্বাধিক সংখ্যক আহলে বাইতের রাসুলুল্লাহর (দঃ) মাজার অবস্থিত। জুমার দিনে এ সকল জায়গায় প্রচুর লোক সমাগম হয়ে থাকে।
নুর নবীজীর (দঃ) সময়ে আফ্রিকার দেশ আবিসিনিয়ার খৃষ্টান রাজা নাজ্জাশি ছিলেন এখানকার শাসক। মুসলমানদের প্রতি তাঁর মনোভাব সবসময় ছিল নমনীয় ও সহানুভূতিশীল। নুর নবীজীর নির্দেশে কুরাঈশদের অত্যাচার কবলিত মুসলমানদের কাফেলা আবিসিনিয়া হিজরতও করেছিলেন।

এরপর ইসলামের দিত্বীয় খলীফা হযরত ওমর ফারুকর (রাদিঃ) সময়ে ২১ হিজরী মুতাবিক ৬৪২ খৃঃ মিশর বিজিত হয়। এর নায়ক ছিলেন বীর সেনাপতি হযরত আমর ইবনুল আস (রাদিঃ)। সেই তখন থেকেই মিশর সুন্নী মুসলমানদের এক গৌরবময় আবাসভূমি হিসেবে ইতিহাসে ঠাঁই করে নিয়েছে। যদিও মাঝে মাঝে এই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েছে। কিন্তু বীর মিশরবাসীরা সত্যকে বরণ করে নিতে কক্ষনো ভুল করেনি। মিশরের জনসংখ্যার ৯৪% সুন্নী মুসলমান। উল্লেখ্য, মিশর সুদীর্ঘ প্রায় সাত শতাব্দীকাল ধরে সুন্নী মতাদর্শ ভিত্তিক ঐতিহ্য লালন করে আসছে। বর্তমানের ইউরোপ ও আমেরিকার সমর্থিত রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডএর আন্দোলন মূলতঃ উবিংশ শতকের সংস্কারপন্থী লেখক ও রাজনীতিবিদ শেখ মুহাম্মদ আবদুর ভাবধারার পুনরুজ্জীবন।শেখ আবদু ইবনে তাইমিয়ার মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনী মুবারাকের (১৯৮১ খৃঃ -২০১১খৃঃ) ইসলাম প্রিয় ও সহনশীল মনোভাবের সুযোগ নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে মিশরে কট্টরপন্থী মুসলিম ব্রাদারহুডসংগঠনটি বৈদেশিক শক্তির প্রত্যক্ষ সাহায্য সহযোগীতা নিয়ে বর্তমানে বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
মিশরে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হলেন, শায়খুল আযহার, যিনি আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান। প্রেসিডেন্টের পরেই তাঁর স্থান।বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর মতামত অগ্রগণ্য। পদাধিকারবলে শায়খুল আযহার সমগ্র মিশরের প্রধান ও জাতীয় ইমাম। কায়রোর বিখ্যাত আল আযহারী মসজিদে তিনি জুমুয়ার নামাজের খুতবা দিয়ে থাকেন।এই জুমুয়ার নামাজের সকল কার্যক্রম সরাসরি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়।
২০০২ সালের ডিসেম্বর মাসে নারিন্দার পীর সাহেবের আওলাদ বর্তমান গদীনশীন পীর জনাব আলহাজ্জ হযরত মাওলানা শাহ্‌ মোহাম্মদ আহসানুজ্জামান সাহেবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে ৮ জনের একটা দল মিশর সফরে যান। দলের অপরাপর সদস্যরা ছিলেন - জনাব আলহাজ মোহাম্মদ ইসমাইল মিয়া (সিলেটের সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বর্তমানে আহসানিয়া ইনস্টিটিউট অব সূফীজম এর পরিচালক), যশোরের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জনাব আলহাজ শামীম মোহাম্মদ আফজাল (বর্তমানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক), রাজবাড়ীর তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ জনাব আলহাজ শেখ সাইদুল ইসলাম, যশোর জমিয়তুল মোদাররেসিনের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম সহ আরো বেশ কয়েকজন। আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনকালে তাঁরা শায়খুল আযহার ডঃ মুহাম্মদ সাইয়্যেদ আত তানতাবীর সাথে দেখা করেন। পারস্পরিক আলাপকালে শায়খুল আযহার তাঁদের কাছে বাংলাদেশে প্রচিলত পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর আনুষ্ঠানিক উদযাপনের কথা শুনে সন্তোষ প্রকাশ করে মিশরেও রাষ্ট্রীয়ভাবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের সংবাদ জানান। তিনি বলেন, “এটা অতি মুবারাক ও পুণ্যময় অনুষ্ঠান
প্রমান স্বরূপ আমি এখানে ১২ মে, ২০০৩ খৃঃ মিশরের সুপ্রীম কাউন্সিল ফর ইসলামিক এফেয়ার্স এর পঞ্চদশ ও সাধারন সম্মেলনে আগত সুধী ও অভ্যাগতদের উদ্দেশ্যে মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনী মুবারাক (১৯৮১ খৃঃ -২০১১খৃঃ) কর্তৃক ইংরেজিতে প্রদত্ত রাষ্ট্রীয়ভাষণের অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করছি দেখে আসুন মিশর পৃঃ ১৮৪
মিশরের আরেকজন সম্মানিত ও পরম শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি হলেন গ্র্যান্ড মুফতী।ইসলামী বিষয়ে তাঁর ফতোয়া চূড়ান্তরূপে গণ্য। শুধু মিসরেই নয়, সারা মুসিলম জাহান জুড়েও এই দুই ব্যক্তি সর্বজনমান্য। ২০০২ সালে গ্র্যান্ড মুফতী ছিলেন ডঃ আহমদ মুহাম্মদ আত তাইয়্যব।সাক্ষাৎকালে তিনিও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের বিষয়ে মাননীয় শায়খুল আযহার সাহেবের অনুরূপ মন্তব্য করেন।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের ব্যাপারে মিশরের আরেকজন গ্র্যান্ড মুফতীর অভিমত মাসিক তরজুমানর ফেব্রুয়ারি ২০১১ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে (পৃঃ২৬-২৯)। তিনি বলেছেন, “পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা অতি উত্তম কাজ।’’
১। মালাউয়ী - আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিনে অবস্থিত মালাউই-তে হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর জন্ম ও ওফাত দিবস মুসলিম ও খৃষ্টান সম্প্রদায় একসাথে পালন করেছে। এই উপলক্ষে যে শোভাযাত্রা বের হয় তাতে স্থানীয় খৃষ্টান সম্প্রদায়ের লোকও সামিল হন। এমনকি বিভিন্ন চার্চেও এই দিনে হুযুর পাককে (দঃ) নিয়ে আলোচনা হয়। খৃষ্টান কর্তৃপক্ষ শেখ আমানান কিংওবে কে এই তথ্য দেন। শেখ আমানান কিংওবে ইসলামডটনেট ওয়েব সাইটে এই তথ্য দেন। তিনি আরো বলেন, “খৃষ্টান নেতারা তাঁকে বলেছেন- এই ধরণের কাজের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে তারা ইসলাম এবং এর ভিত্তি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারবেন। মালাউই সেকুলার রাষ্ট্র। মুসিলম হল এখানে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ। রাসুল পাক (দঃ) এর জন্ম ও ওফাত দিবসকে উপলক্ষ করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন হল তা অন্য দেশের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে এবং মুসলিম-খৃষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক ভুল বোঝাবুঝির অবসানকল্পে অনুকরণীয় হিসেবে কাজ করবে।
সূত্র দৈনিক ইত্তেফাক, শুক্রবারের সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র ধর্মচিন্তা পৃঃ ২৪, ২০ মার্চ, ২০০৯।
২। মরক্কো আফ্রিকার অন্যতম মুসলিম দেশ মরক্কোতেও প্রিয়নবীর (দঃ) এর জন্মদিবস প্রতিপালিত হয়ে থাকে। এ উপলক্ষে ঐদিন সরকারী ও বেসরকারি সব অফিস আদালত ছুটি থাকে। তাঁরা এ দিনটিকে ইয়াওমে বিলাদাতহিসেবে খুব ভক্তি- শ্রদ্ধার সাথে উদযাপন করে। সর্বত্র যিকিরে মিলাদবা নুর নবীজীর (দঃ) শুভাগমনের আলোচনা মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দুরুদ সালাম ও তাবাররুক বিতরণ করা হয়। সূত্র মাসিক তরজুমান, ফেব্রুয়ারী ২০১১ সংখ্যা, পৃঃ ১৩।